রক্ত দিন, জীবন বাঁচান।
রক্ত মানবদেহের প্রয়োজনীয় একটি জলীয় উপাদান যার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড সারা দেহে নানা উপাদান সরবরাহ করে থাকে।
শরীরের বিভিন্ন কোষের মধ্যে পুষ্টি সরবরাহ করা, শক্তি সরবরাহ করা, দূষিত উপাদান বের করে নিয়ে আসা ইত্যাদি কার্যাবলী রক্তের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।
যদি মানবদেহে রক্ত না থাকে তাহলে মানুষের বাঁচার কোন উপায় থাকে না।
একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরে ৫ থেকে ৬ লিটার রক্ত থাকে, যা মানবদেহের মোট শরীরের ভরের প্রায় ৭ শতাংশ।
রক্তদান হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন সুস্থ সবল মানুষ ১ ব্যাগ রক্ত নিঃস্বার্থভাবে দান করেন একজন মুমুর্ষু রোগীকে যা রোগীটির জীবন বাঁচাতে সহায়তা করে। সমাজের সুস্থ সবল মানুষের রক্তদানে এগিয়ে আসা উচিত।
A+ B+ AB+ O+
A- B- AB- O-
পজিটিভ রক্তের গ্রুপগুলো অনেকটাই সহজলভ্য
নেগেটিভ রক্তের গ্রুপগুলো দুর্লভ।
আমাদের দেশে প্রতি বছর বিভিন্ন রোগীর জন্য প্রায় ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের এই জনবহুল দেশে মাত্র ৯ লাখ ব্যাগ রক্তও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রতি বছর সংগ্রহীত হয় না। রক্তের অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন অসংখ্য রোগী।
🔸ক্যান্সার 🔸থ্যালাসেমিয়া🔸রক্ত স্বল্পতা 🔸দূঘর্টনায় রক্তক্ষরণ🔸কিডনি ডায়ালসিস
🔸ডেঙ্গু জ্বর এবং
বিভিন্ন সার্জারির সময় রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়।
মানুষের মাঝে রক্তদানের সম্পর্কে এখনো রয়েছে অনেক ভুল ধারনা এবং ভয়। অনেকে মনে করেন রক্তদান করলে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাবে, শরীর দুর্বল হয়ে যাবে, আবার অনেকে সূচের ভয়ে রক্তদান করতে চান না। আসলে রক্তদান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং দেহে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন বা লৌহ সঞ্চয় প্রতিরোধ করে।
শুধূমাত্র সূচ ফোটানোর সময় অল্প একটু ব্যাথা অনুভব হবে যা একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর তুলনায় একদম নগণ্য।
ডায়াবেটিকের রোগী রক্ত দিতে পারবে না - এটিও ভুল ধারণা। ডায়াবেটিকের রোগী রক্তদান করতে পারবেন যদিঃ
(১) রক্তদানের সময় সুগার লেভেল নরমাল থাকে,
(২) রক্তদাতা যদি ইনসুলিন গ্রহন করে না থাকেন।
উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তদান করা যায় না - এটিও ভুল ধারণা। উচ্চ রক্তচাপের রোগীও রক্তদান করতে পারবেন যদি রক্তদানের মুহূর্তে ব্লাড প্রেশার নরমাল থাকে (সাধারনত ১২০/৮০ কে নরমাল ধরা হয়), তাহলে রক্তদান করতে পারবেন।
▪️১৮ বছর থেকে ৬০ বছরের যেকোনো সুস্থদেহের মানুষ রক্ত দান করতে পারবেন।
▪️শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ নিরোগ ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন।
▪️আপনার ওজন অবশ্যই ৫০ কিলোগ্রাম কিংবা তার বেশি হতে হবে।
▪️৪ মাস অন্তর-অন্তর রক্ত-দান করা যায়।
▪️রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ, রক্তচাপ ও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে হবে।
▪️শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ এ্যাজমা, হাপানি যাদের আছে তারা রক্ত দিতে পারবেন না।
▪️রক্তবাহিত জটিল রোগ যেমন-ম্যালেরিয়া, সিফিলিস , গনোরিয়া, হেপাটাইটিস , এইডস, চর্মরোগ , হৃদরোগ , ডায়াবেটিস , টাইফয়েড এবং বাতজ্বর না থাকলে।
▪️আপনাকে চর্মরোগ মুক্ত হতে হবে।
▪️মহিলাদের মধ্যে যারা গর্ভবতী নন এবং যাদের মাসিক চলছে না।
▪️আপনাকে অবশ্যই হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, এইডস, ক্যান্সার, যক্ষা, সিজোফ্রেনিয়া এবং ম্যালেরিয়া রোগমুক্ত হতে হবে।
▪️এ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ শেষ হবার ৭ দিন পর রক্তদান করা যাবে।
প্রথম এবং প্রধান কারণ, আপনার দানকৃত রক্ত একজন মানুষের জীবন বাঁচাবে। রক্তদানের জন্য এর থেকে বড় কারণ আর কি হতে পারে !
রক্তদান করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়, হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে, দেহে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন বা লৌহ সঞ্চয় প্রতিরোধ করে।
নিজের মাঝে একধরনের আত্মতৃপ্তি উপলব্ধি করা যায়। তাছাড়া, নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে বিনা খরচে রক্তদাতার শারীরিক পরীক্ষা হয়ে যায় কারন রক্তদানের পূর্বে রক্তদাতার রক্তের ৫ ধরনের পরীক্ষা করা হয়ঃ এইডস, হেপাটাইটিস-বি ও হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এবং ম্যালেরিয়া।
রক্তদানের নিয়ম মেনে চললে রক্তদানে ভয়ের কিছু নেই।
৪ মাস পর পর রক্তদান করা যায়। ৪ মাসের আগে রক্তদান করা উচিত নয়।
রক্তদানের পর ১৫-২০ মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নিতে হবে, এবং পরবর্তী ২৪ ঘন্টা প্রচুর পরিমানে পানি খেতে হবে।
রক্তদান পুরো প্রক্রিয়াটি নিরাপদ। একজন বিশেষজ্ঞ সবসময় পাশে থাকেন।
শারীরিক পরীক্ষায় আপনি রক্তদানের যোগ্য হলেই কেবল রক্তদাতা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। সুতরাং ভয়ের কিছু থাকে না।
১৬ কোটি মানুষের এই জনবহুল বাংলাদেশে প্রতি বছরে প্রয়োজনীয় ৯ লাখ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা কঠিন কিছু নয়, শুধু প্রয়োজন মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা।
রক্তদানের উপকারিতা, যোগ্যতা এবং ভুল ধারনাগুলো মানুষকে বুঝিয়ে সচেতন করতে হবে। শুধুমাত্র সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই বাংলাদেশের রক্তের সমস্যার সমধান সম্ভব।
যে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসুন। নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী, পরিচিত মানুষের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখুন, নোট করে রাখুন। হয়তো একদিন আপনার প্রিয় মানুষের রক্তের প্রয়োজনে আপনিই হতে পারবেন সবচেয়ে বড় রিসোর্স।
হ্যাপ্পি ব্লাড ডোনেটিং